পয়লা বৈশাখ

আজ পয়লা বৈশাখ। দুই বন্ধুর পয়লা বৈশাখের কীর্তিকলাপের গল্প।

 

প্রথম গল্পটা তমালকে নিয়ে। তমাল কলকাতার বেশ বড়সড় কোম্পানীর উঁচুদরের অফিসার। সেল্স-মার্কেটিঙের চীফ। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট এলাকায় ওর ফ্ল্যাট।

ভারতবর্ষের সব রাজ্যেই ওর ক্লায়েণ্ট আছে। রাজ্যের বিশেষ বিশেষ ফেস্টিভ্যালে ক্লায়েণ্টদের গিফ্ট দেওয়াটা প্রচলিত রীতি ওর অফিসে। তমাল join করার পর থেকে decision নেওয়া হয়েছে, পয়লা বৈশাখের গিফ্টটা হবে high quality-র বোঁদের বাক্স। তমালের পাড়ার বাঞ্ছারামে সেই বোঁদে তৈরী ও প্যাকিং হয়। শহুরে high net worth বাঙালীকে reliving a fantasy-র experience দিতে অফিসের ছেলেমেয়েরা পয়লা বৈশাখের সকাল সকাল ফুল এবং বোঁদের প্যাকেট নিয়ে হাজির হয় ক্লায়েণ্টের বাড়ীতে।

অফিসের ছেলেমেয়েরা কিন্তু ভালই ওয়াকিবহাল। যা প্রশ্ন করার, ব্যবস্থা করার, পয়লা বৈশাখের আগেই complete করতে হবে। তমাল পয়লা বৈশাখ সারাদিন unreachable.

তমালকে জিগ্যেস করলে, বলে, “বাবার দেশের বাড়িতে বোঁদে খেতে যাই!”

“ধ্যুর, তোর না সুগার! মিষ্টি তো খাস না তুই!”

দুটো নদী পেরিয়ে, তমাল বর্ধমান জেলার বড়বৈনানের রাস্তায় হাঁটছে যখন, বেলা হয়ে গেছে, সকল বয়স্ক মানুষকে প্রণাম করে, একটু কথা বলতে বলতে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তবুও হাসিমুখ তমাল। তমাল জানে, খাঁটি মানুষ খাঁটি সোনার মতন, আর খাঁটি সোনার রং যে ভাল বোঁদের মতনই উজ্জ্বল হলুদ!

 

 

 

দ্বিতীয় গল্পটায় সোম। আমাকে যারা চেনে, তারা সকলে সোমকেও চেনে। সোমশুভ্র।

সোমকে একটু বেশী active দেখতাম পয়লা বৈশাখের আগের দিন পনেরো। কোথায় কোথায় দূর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পুরনো কিছু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কী যে করে কিছুই বলে না। বৈশাখ মাস পড়লে, আবার normal সোমকে ফিরে পাওয়া যায়।

একত্রিশ বছরের বন্ধুত্ব। একদিনের জন্যও বলে নি চৈত্রের শেষ দুটো সপ্তাহে কি করে ও। জানতে পারলাম, এই সেদিন, বছর খানেক আগে, পার্ক স্ট্রিটের Moulin Rouge-এ।

বেশ উত্তেজিতভাবে বলতে শুরু করলো –

“যাপন করো, যাপন করো! অনেক তো বললে! আর বোলো না! মিলিয়ে নিতে হবে সব! জাগিয়ে দিতে হবে সব! নতুন করে নিতে হবে সব! বাঁচিয়ে রাখতে হবে সব! শোনো, আমি বলি।”

সোম আবৃত্তি করে চলে –

“এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে   মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
     বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক॥
যাক পুরাতন স্মৃতি,   যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,
     অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক॥
     মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
     অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি   শুষ্ক করি দাও আসি,
     আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ।
     মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক॥”

বুঝলে, বুঝলে কিছু! জানি! জানি! কিছুই বুঝবে না তুমি!”

 

 

আরও একটা পয়লা বৈশাখ এলো। আমি পারিনি!