চিরনূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

“এ পরবাসে রবে কে হায়!” শুনতে শুনতে ভাবতাম ছোটবেলায়, কী কষ্টেই না থাকে ঘরছাড়া প্রবাসী মানুষেরা। না আছে নিজের কেউ কথা বলার, না আছে নিজের কেউ মনটায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দেওয়ার। বড্ড কষ্টে আছে ওরা।

খটকাটা প্রথম লাগল, “কাঞ্চনজঙ্ঘা” সিনেমা দেখতে গিয়ে। দেখি, এক ভদ্রমহিলা, এই গানটাই গাইছেন, দার্জিলিঙের ম্যালে বসে। বাড়ির সকলের সঙ্গেই তো রয়েছেন উনি! তাহলে পরিচালক এই গানটাই শোনাচ্ছেন কেন? জিগ্যেস করে বসলাম, “আচ্ছা, দার্জিলিং তো ভারতবর্ষে? তাই না?”

বারবার শুনছি, “কাছে থেকে দূর রচিল কেন গো আঁধারে”, “কাছে যবে ছিল পাশে হল না যাওয়া”, “সে যে পাশে এসে বসেছিল, তবু জাগি নি”। এখানেও সেই প্রশ্নটা বারবার উঁকি মেরে যায়, কাছে থেকেও যদি দূরই রচনা করতে হয়, তবে দূরে থাকলেই বা ক্ষতি কি? দূরে থেকেও কি নিকট নির্মাণ করা যায় না?

যখন পরবাস আর নিজবাস, দূর আর নিকট, এই সব নিয়ে বিহ্বল, Seneca তাঁর “On the Shortness of Life”-এ বললেন, মানুষ নাকি মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে, তবেই উপলব্ধি করে, কিভাবে বাঁচতে হয়! পুরোপুরি হতভম্ব আমি! তাহলে বাঁচবো কোথায়? বাঁচবো কিভাবে?

কয়েক বছর আগে, সন্ধান পেলাম, “আজীবন দীর্ঘ পরবাস”-এর। শঙ্খ ঘোষের লেখা। পরবাস, তাও আবার আজীবন দীর্ঘ! নিজের ঘরে নিজেই পর! আজীবন! বুঝলাম, স্থান-কাল নয়, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে, নিজের ভেতরটায় একান্ত নিজস্ব এক স্বপ্নের ঘর নির্মাণ করতে হয়, এক চিলতে বেঁচে নেওয়ার তাগিদে।

বিদেশিনীর পিয়ানোয় “Auld Lang Syne”-এ যখন শুনি “পুরানো সেই দিনের কথা”-র কলতান, ঠিক তখনই, কানে আসে, “সদা থাকো আনন্দে”, এক রবীন্দ্রসাধকের কণ্ঠে, পৃথিবীর ওপার থেকে! মরণধর্মী অহং-এর আড়ালটা খসে যায়! রবি ঠাকুরকে ছুঁয়ে পৌঁছে যাই উপনিষদে! “আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে” দেখি এক সমন্বিত বিশ্বসংসার! এক অনন্ত প্রবাহ!

 

বড় দেরী হয়ে গেল! বড় দেরী হয়ে যায়!