জেতাহারার গল্প

ছোট্টবেলা থেকে “বীরপুরুষ” হয়ে রামায়ণ-মহাভারত শুনতে শুনতে জেতাটাকেই জীবনমন্ত্র করে ফেলি আমরা।  স্কুলে-কলেজে কোথাও আমরা জানতেই পারলাম না, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে শ্রীকৃষ্ণ ঠিক কি বলেছিলেন অর্জুনকে। সেই কথাগুলোর মানেটাই বা কি?  শুধু যুদ্ধটুকুই থেকে গেল! মারাদোনার একা দৌড়ে গোল দেওয়াটাই জীবনের Fantasy হয়ে গেল!

অথচ বিদেশবিঁভুই-এর বিশ্ববিদ্যালয়ে Indian Philosophy পড়ুয়া সাদাকালোবাদামী ছাত্রছাত্রীরা মুগ্ধবিস্ময়ে শোনে, অভারতীয় প্রফেসরের গভীর আলোচনা বিশ্বজনীন মূল্যবোধের উন্মোচনে। প্রশ্নগুলোর জন্ম হয় – জেতাটা আসলে কি? জীবনে জেতার ভূমিকাটাই বা কি?

ইহুদি উপকথা David ও Goliath -এর গল্পে একটা জেতা আছে, একটু অন্যরকম। জীবনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা বুঝে গেলাম জেতার Mechanism আর Pattern-টা,  কারা জেতে বারবার। আমরা হারতেই ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠি। David ও Goliath -এর গল্পে David এক সাধারণ রাখাল। তার হাতে একটা গুলতি। আর, Goliath অস্ত্রবর্মে সজ্জিত যোদ্ধা। হারারই কথা ছিল David-এর, তবু জেতে সে। কি করে? বুদ্ধির জোরে। টাকাপয়সা ধর্ম রঙ ক্ষমতা – এসব দিয়ে তো কেনা যায় না সেই বুদ্ধি। সারা পৃথিবীর সমস্ত Underdog-দের Inspire করে এই David-এর গল্প। 

এক্কেবারে আধুনিক তত্ত্বকথা, নীলসমুদ্র-লালসমুদ্রের গল্প। লালসমুদ্র (Red Ocean)-এর জন্ম হয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-এর শেষে মৃত মানুষের লাল রক্তে। আর, অন্য় সমুদ্রের রঙ বদলে যায় স্বপ্নের নীল রঙে। নীলসমুদ্র (Blue Ocean)-এ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম নেই। Imagination বা Creativity বা Innovation-এর সবকিছুই নীলসমুদ্রে। আর তাই, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “মনীষার দুই প্রেমিক”-এর মতো গল্প লড়াই করে বা যুদ্ধ করে সৃষ্টি করা যায় না! সেই সৃজনে থাকে গভীর অনুভূতি, সূক্ষ বোধ, যা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একান্ত নিজস্ব। সুনীলের সৃষ্টির এই যে পাঠকমনের অতল ছুঁয়ে সিদ্ধিলাভ,  সেখানে ছিটেফোঁটা কোনো Competition নেই!

“হেরে” গিয়েও জিতে যাওয়ার গল্প খুঁজতে  Google করে ফেললাম, Dirk Willems-কে। ষোড়শ শতাব্দীর ঘটনা। বন্দী Dirk দড়ির সাহায্যে জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলেন জেল থেকে। জেলের চারপাশের পরিখা পেরিয়ে গিয়ে, পিছন ফিরে, খেয়াল করলেন, এতক্ষণ ধাওয়া করতে থাকা জেলের  রক্ষীকে আর দেখা  যাচ্ছে না। রক্ষীটি কি পরিখার জলে ডুবে গেল? বরফঠাণ্ডা জলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাহলে তো সমূহ মৃত্যু তার। এবার Dirk-এর লড়াইটা একান্ত তাঁর নিজের সঙ্গে – পালাবেন নিজেকে বাঁচাতে? না, মৃত্যুমুখী মানুষটিকে বাঁচাবেন?

রক্ষীটিকে বাঁচালেন Dirk। ধরা হলো Dirk-কে। এবং জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হলো। 

এই নির্মম পৃথিবীর সমস্ত অসহায়তা উপেক্ষা করেও প্রচুর মানুষ এখনো আছেন, যারা Dirk Willems-এর অনুগামী। শুধু Compassion আর Forgiveness দিয়েই জয়ী হতে চান এই জীবনযুদ্ধে!